মেজর ও ম্যাজিস্ট্রেট এর মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর (মেজর vs ম্যাজিস্ট্রেট)
একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর? কার বেশি জোর, কে সব থেকে বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে! আজকের এই আর্টিকেলে মূলত আমরা এ বিষয় সম্পর্কে অবগত হবো। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আশা করি সবাই ভাল এবং সুস্থ আছেন। সবাইকে স্বাগতম জানাই আমাদের আজকের আলোচনা পর্বে।
আপনারা যারা একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর এ সম্পর্কে জানতে চান, তাদেরকে বলব মনোযোগ সহকারে এই ছোট্ট আর্টিকেলটি পড়ুন। তাহলে আসুন শুরু করা যাক।
আরও পড়ুনঃ একজন সাব-ইন্সপেক্টরের ক্ষমতা কী কী?
একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর?
একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর এটা যদি আপনি সুস্পষ্টভাবে বুঝতে চান তাহলে প্রথমত আপনাকে মেজর কাকে বলে এবং ম্যাজিস্ট্রেট কাকে বলে এটা জানতে হবে। পাশাপাশি এদের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে, এদের কার্যাবলী কি কি, এরা মূলত কোন কোন দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।
তাহলে আসুন– একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর এ সম্পর্কে জানার পূর্বে এদের কার্যাবলী ও দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হওয়া যাক। তবে হ্যাঁ, যারা সংক্ষেপে জানতে চান– একজন মেজর এবং একজন ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে কে বেশি ক্ষমতাধর?
তাদেরকে বলব– আবার দৃষ্টিতে ম্যাজিস্ট্রেট হচ্ছে বেশি ক্ষমতাধর। তবে প্রকৃতপক্ষে মেজর এর ক্ষমতা বেশি। কারণ সেনাবাহিনীর ক্ষমতার সাথে নির্বাহী ক্ষমতার তুলনা করা সত্যিই সম্ভব নয়। কেননা যদি একবার সেনাবাহিনীর হাতে দেশের ক্ষমতা চলে যায় অর্থাৎ দেশ দখল করে ফেলে তাহলে মেজরগণ এমপির মত ক্ষমতাধর হয়ে যেতে পারবে।
আর এটা সম্পর্কে আমরা জানি– সেনাবাহিনী মূলত প্রয়োজন ছাড়া ক্ষমতা প্রদর্শন করে না এবং তারা ক্যান্টনমেন্টের বাইরে আসে না যদি না অতিরিক্ত দরকার হয়। আর এ কারণেই আপাতদৃষ্টিতে ম্যাজিস্ট্রেটকে বেশী ক্ষমতাধর মনে করে থাকি আমরা। তবে প্রকৃতপক্ষে একজন মেজর এর ক্ষমতা ম্যাজিস্ট্রেটের তুলনায় অধিক বেশি থেকে থাকে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে নিচেরর বিষয়গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আরও পড়ুনঃ কাস্টমস সিপাই এর কাজ কি?
মেজর কি | মেজর কাকে বলে?
মেজর শব্দটি হচ্ছে একটি প্রশাসনিক বা সামরিক পদ, যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। সেনাবাহিনীর উচ্চতর পদের নাম মেজর।
মূলত যারা সেনাবাহিনীর অধিনায়কের ভূমিকায় অবস্থান করেন তাদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ এর ডিভিশন মতাবেক– মেজর জেনারেল বলে সম্বোধন করা হয়।
অতএব বলা যায় সেনাবাহিনীর যে সকল অধিনায়করা মেজর জেনারেল পদে কর্মরত থাকেন তাদেরকে মেজর বলা হয়। যেমন বাংলাদেশের বর্তমান সেনাপ্রধান জেনারেল মেজর এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ।
ম্যাজিস্ট্রেট কি | ম্যাজিস্ট্রেট কাকে বলে?
ম্যাজিস্ট্রেট হলো একজন সিভিল অফিসার, যে বা যারা আইন প্রয়োগ ও বিচারকার্যর দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট বলা হয়।
আরেকটু ভিন্নভাবে বললে বলা যায়, আইন পরিচালনা ও প্রয়োগ করার সীমিত কর্তৃত্ব সহ একজন বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাকে ম্যাজিস্ট্রেট বলে। ম্যাজিস্ট্রেট শব্দটি ল্যাটিন Magistratus শব্দ থেকে এসেছে, যার মানে Administrator বা শাসক।
আমাদের বাংলাদেশের বর্তমানে ম্যাজিস্ট্রেট বলতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বোঝানো হয়। বিভিন্ন জেলার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিভিন্ন পর্যায়ের ম্যাজিস্ট্রেট গণদের পদবী বা সংবর্ধনা হলো:-
- চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
- অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
- সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং
- জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট
যাদের প্রত্যেকেই ন্যায় বিচার বা ন্যায়বিচারপতি হিসেবে পরিচয় বহন করেন।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ রেলওয়ে এর ওয়েম্যান এর কাজ কি?
একজন মেজর এর কাজ কি কি?
মেজর হলো একটি পদবি, যা সশস্ত্র বাহিনীতে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনীতে মেজর একজন উচ্চতর স্তরের অফিসার হিসেবে পদোন্নত হয়। মেজরদের প্রধানতম দায়িত্ব হলো তাদের সেনা বাহিনী বা অন্য সশস্ত্র বাহিনীর একটি ইউনিটের কমানাধীনে আইন শৃংখলা, নির্দেশনা এবং পরিচর্যার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট নিশ্চয়তার মধ্যে পাঠানো এবং সংগঠন করা। মেজরদের দায়িত্ব সংক্রান্ত কিছু উদাহরণ হলোঃ
১. তাদের ইউনিটের সমস্ত কর্মকান্ড নির্দেশনা দেওয়া এবং সেনা বাহিনীর নীতিমালা এবং নীতি প্রয়োগ করা।
২. সমস্ত প্রশিক্ষণ কর্মকান্ডের পরিচর্যা সংশ্লিষ্ট করা এবং কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এবং উন্নয়ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া।
৩. ০ দলের সম্পদ এবং সরঞ্জাম সঠিকভাবে পরিচালনা এবং সৈন্যদলের ব্যবস্থাপনা ও বৃহত্তম কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখা।
৩. তাছাড়াও বাহিনীর পরিকল্পিত প্ল্যান পূরণের জন্য সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থাপনা গ্রহণের দায়িত্ব এবং টেকনিক্যাল পরামর্শ প্রদান করাও একজন মেজর এর কাজ বা দায়িত্ব।
এক কথায়, সরকারি অফিসার হিসেবে মূলত সশস্ত্র সেনাবাহিনীর হয়ে যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী সেগুলো নেওয়াই হচ্ছে একজন মেজর এর কাজ।
একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ কি কি?
একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ হচ্ছে:-
- ন্যায্য সনদ প্রধান
- ন্যায্য সনদ এর সত্যতা যাচাই
- আইনগত বিষয়বস্তুতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
- আইন ও শাস্ত্রের প্রয়োগ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান
- আদালতিক কার্যক্রম সম্পাদনা
- জামিন ও সাবকার্যসহ প্রভৃতি।
মেজর এবং ম্যাজিস্ট্রেট এর মধ্যে পার্থক্য
আপনি যদি মেজর এবং ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব ও কর্তব্য গুলো তুলনা করেন তাহলে নিশ্চয়ই তাদের মধ্যে কি কি পার্থক্য রয়েছে সেটা বাছাই করতে পারবেন। তবুও বোঝার সুবিধার্থে আমরা এ পর্যায়ে মাত্র তিনটি পার্থক্য তুলে ধরবো। যথা:-
✓ পদের ধরন
মেজর একটি সামরিক পদ, যেখানে তার কর্মকাণ্ডগুলো সামরিক প্রতিষ্ঠানে হয়, যেমন সেনা বা বিমানবাহিনী।
অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেট একটি কারায়ণ পদ। যেখানে কর্মকাণ্ড মূলত ন্যায় প্রতিষ্ঠানে হয়। যেমন:- আদালত বা জেলা প্রশাসন।
✓ কর্মকাণ্ডের ধরন
মেজর একজন সামরিক প্রশাসক, তার দায়িত্ব দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ এবং তার প্রাথমিক কর্তব্য সামরিক কর্মকান্ডের সমর্থন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রণয়ন।
অন্যদিকে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর দায়িত্ব হল কারায়নিক কর্মকান্ডের নিয়ন্ত্রণ ও সমর্থনের জন্য ব্যবস্থাপনা গ্রহণ।
✓ যোগ্যতা ও ক্ষমতা
যেহেতু মেজর এবং ম্যাজিস্ট্রেট এই দুইটি পদমর্যাদা একেবারেই ভিন্ন আঙ্গিকের তাই একজন মেজর এর যোগ্যতা এবং তাদের ক্ষমতার মধ্যে বিরাট একটা পার্থক্য রয়েছে। একজন মেজরের ক্ষমতা সেনাবাহিনী বিভাগে উক্ত দলের হয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
অন্যদিকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা হচ্ছে আইন ও বিচার বিভাগের তদারকের ক্ষেত্রে নিজস্ব মতামত প্রয়োগ এবং ইনভেস্টিগেশনে তার প্রয়োজনীয় কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য যেকোনো পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা।
পড়ে নিনঃ এমওডিসি এর পূর্ণরূপ কি এবং এর কাজ কি?
একজন মেজর এর ক্ষমতা কি কি?
১. সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে মেজররা যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে।
২. দলের প্রধান হয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে
৩. সেনাবাহিনীর কর্তব্য সঠিকভাবে পালনের জন্য রক্ষা ও সুরক্ষা প্রদানে যে কোন প্রয়োজনে যেকোনো পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষমতা রাখে।
৪. মেজরগণ নিজে এবং তার দলের সদস্যদের জন্য পূর্ণ স্তরে সূক্ষ্ম বিক্ষোণ ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারেন এবং অপারেশন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন
এক কথায় সমস্ত কিছুর ব্যবস্থাপনা নেওয়ার ক্ষমতা থাকে মেজর এর। সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে দেশের সুবিধার কথা চিন্তা করে সম্পদ ও দেশের সুশৃঙ্খলা বজায়করণে একজন মেজর মূলত দেশকে পরিচালনা পর্যন্ত করতে পারে। এবার আসুন জেনে নেই একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা কি কি।
একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর ক্ষমতা কি কি?
১. ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা। (ধারা-৬৪)
২. গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা, বা গ্রেপ্তারের জন্য তিনি পরোয়ানা জারি করতে পারেন। (ধারা-৬৫)
৩. ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্ট ধারার অধীনে গ্রেফতারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা। (ধারা-৮৩, ৮৪, ৮৬)
৪. ডকুমেন্ট ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা। (ধারা-৯৫)
৫. অন্যায়ভাবে বন্দী ব্যক্তিদের খোজার জন্য অনুসন্ধান পরোয়ানা জারি করার ক্ষমতা। (ধারা-১০০)
৬. সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা। (ধারা-১০৫)
৭. শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনের ক্ষমতা (ধারা-১০৭)।
৮. শান্তি বজায় রাখতে বা ভাল আচরণের জন্য আবদ্ধ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা (ধারা-১২৪)।
৯. অভ্যাসগত অপরাধীদের কাছ থেকে ভাল আচরণের জন্য জামিন প্রদানের ক্ষমতা (ধারা-১২৬)
১০. বেআইনি সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা (ধারা-১২৭)
১১. ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা (ধারা-১২৮)
১২. বেআইনি সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা (ধারা-১৩০)
১৩. জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা হিসাবে একটি আদেশ জারি করার ক্ষমতা (ধারা-১৪২)
১৪. স্থানীয় তদন্ত করার জন্য তার অধস্তন যে কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিযুক্ত করার ক্ষমতা (ধারা-১৪৮)।
আরও দেখুনঃ জুনিয়র অডিটর বা অডিটর এর কাজ ও যোগ্যতা সম্পর্কে A টু Z
পরিশেষে বলা যায়, ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেজর এদের উভয়ের ক্ষমতায় অনেকটাই বিরাজমান। মূলত নিজ ক্ষেত্র বিশেষে তারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। একজন মেজর মূলত তার দলের পরিচালনার জন্য সকল প্রকার কার্যক্রম সম্পাদন করেন অন্যদিকে ম্যাজিস্ট্রেট আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে কাজ করেন।
তবে সবদিক বিবেচনায় মেজর এর ক্ষমতা বেশি কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আমরা অধিক পরিমাণ প্রয়োগ করা দেখে থাকি। তো সুপ্রিয় দর্শক বন্ধুরা। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।