জেনে নিন- সঠিকভাবে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পসময় আমাদের দরখাস্ত লেখার প্রয়োজন পড়ে। বিশেষ করে আমরা যে সকল তরুণ তরুণী সদ্য পড়াশোনা শেষ করেছি বা অনার্সে পড়ছি তাদের মূলত দরখাস্তটা অধিক বেশি জরুরি হয়ে ওঠে। কেননা বর্তমানে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীদের উদ্দেশ্য থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি এমন একটি চাকরি করা যেটা তার ক্যারিয়ার জীবনে বেশ ভালো পারফর্ম করবে।
কিন্তু অনেকেই আমরা চাকরির দরখাস্ত লেখার সঠিক নিয়ম জানি না। অথচ চাকরির দরখাস্থের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে চাকরি হওয়া অথবা না হওয়া। আর তাই আমাদের আজকের প্রবন্ধে আপনাদেরকে জানাবো সঠিকভাবে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আপনি যদি সঠিকভাবে দরখাস্ত লিখতে চান এবং আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরো বৃদ্ধি করতে চান তাহলে চাকরির দরখাস্ত সঠিকভাবে লেখার চেষ্টা করুন।
কেননা একটি দরখাস্ত পত্রের মাধ্যমে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা নম্রতা ও আচার আচরণের বেশ কিছু বিষয় মাপকাঠি করতে পারে। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই এই দরখাস্তটি গুছিয়ে এবং মার্জিত উপায়ে লিখতে জানতে হবে। তাহলে আসুন জেনে নেই চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম ও দরখাস্ত সম্পর্কে আরো খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু।
আরো পড়ুনঃ ইন্টারভিউ টিপস | কিভাবে ইন্টারভিউ দিতে হয়?
চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম
চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম অত্যন্ত সহজ। তবে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে একটু আলাদাভাবে দরখাস্ত লেখার চেষ্টা করাটা একটি মানুষের ক্রিয়েটিভ মাইন্ড এর পরিচয় বহন করে। তাই আপনি যদি চাকরি প্রদানকৃত কর্তৃপক্ষের নজরে আসতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে কিছুটা আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে জানতে হবে।
আর তাই আজকের এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরির বেশ কয়েকটি চাকরির দরখাস্তের নমুনা আপনাদের সুবিধার্থে উপস্থাপন করব। তবে তার আগে চলুন জেনে নেই দরখাস্ত কাকে বলে? দরখাস্ত কত প্রকার? দরখাস্তের কয়টি অংশ ও কি কি এবং দরখাস্ত লেখার সঠিক ও সুন্দর নিয়ম এবং নমুনা।
আরো পড়ুনঃ মুক্তপাঠ সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার নিয়ম
দরখাস্ত কি?
দরখাস্ত হচ্ছে সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা একটি পরিচয় পত্র। যেখানে একজন ব্যক্তির সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা থাকে।
দরখাস্ত কাকে বলে?
ব্যাকরণের ভাষায়– স্কুল কলেজ কিংবা নানা অফিস ও প্রতিষ্ঠান প্রধান বা দায়িত্ব প্রধান ব্যক্তিকে অনুরোধ জানিয়ে যে আবেদন পত্রটি লেখা হয় তাকেই দরখাস্ত বলে। আবার আরেকটু ভিন্ন ভাবে বললে বলা যায়– একটি নির্দিষ্ট গঠন কাঠামো এবং নিয়ম অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষের নিকট সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে অল্প আলোচনার মাধ্যমে একটি আবেদন পত্র তুলে ধরাটাই দরখাস্ত। আমরা মূলত বিভিন্ন বিষয়ে অনুরোধ অথবা আবেদন করার জন্য এ ধরনের পত্র লিখে থাকে।
দরখাস্ত কত প্রকার ও কি কি?
আকার ও ধারণগত দিক থেকে দরখাস্তকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. আবেদনপত্র
২. ব্যবসায়িক পত্র
আমাদের মাঝে এক শ্রেণীর মানুষ রয়েছেন যারা মানপত্র, ব্যক্তিগত চিঠি, অঙ্গীকারনামা ইত্যাদিকে দরখাস্ত বলে মনে করেন। তবে প্রকৃতপক্ষে এগুলো দরখাস্তের অন্তর্ভুক্ত নয়। মূলত কোন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রধান বা প্রতিষ্ঠান প্রধানকে অনুরোধ করে আমরা যে বিনিময় পত্র লিখে থাকে তাই হচ্ছে আবেদন পত্র।
অপরদিকে নিজেদের প্রয়োজনে কিংবা ব্যবসার প্রয়োজনে অনেক সময় অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সঙ্গে ভাব আদান-প্রদানের জন্য আমরা যে পত্র লিখি সেটা হচ্ছে ব্যবসায়িক পত্র। এবার আসুন দরখাস্ত লেখার সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা ধাপগুলো সম্পর্কে জেনে নেই। সুতরাং আপনি যদি দরখাস্ত লিখতে চান তাহলে আপনাকে কোন নিয়ম ফলো করে চলতে হবে সেটা আমরা স্টেপ বাই স্টেপ এ পর্যায়ে তুলে ধরব।
দরখাস্ত লেখার নিয়ম
আপনি যদি দরখাস্ত লেখার নিয়ম জানতে পারেন এবং একটি মাত্র দরখাস্ত সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে ফুলফিল ভাবে লিখতে পারেন তাহলে, আপনি আপনার লাইফের প্রয়োজনীয় সকল ধরনের দরখাস্ত খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। তাই আলাদা করে সঠিকভাবে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম আপনাকে জানতে হবে না। তাই প্রয়োজনীয় যেকোনো দরখাস্ত লেখার সময় অবশ্যই এই নির্দিষ্ট নিয়মাবলী অনুসরণ করবেন। যথা:
✓ বাম পাশে সবার প্রথমে তারিখ লিখবেন।
✓ পরবর্তীতে প্রাপকের নাম, পদবী এবং ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
✓ এবার আপনি যে বিষয়ে দরখাস্তটি লিখবেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করবেন।
✓ বিষয় লেখার পর সম্ভাষণ লিখবেন।
✓ আবেদন পত্রটির মূল অংশে এ পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট কিছু আলোচনা করবেন অতি সংক্ষেপে।
✓ সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করার পরবর্তীতে বিনীত নিবেদক কথাটি উল্লেখ করবেন।
✓প্রেরক বা আবেদনকারীর নামও ঠিকানা উল্লেখ করবেন পরবর্তীতে।
✓ এরপর সর্বশেষে আবেদনপত্রটির একটি সুন্দর খামের মধ্যে রেখে কর্তৃপক্ষ বা প্রাপকের নিকট পাঠাবেন।
ব্যাস আপনার কাজ এ পর্যন্তই।
দরখাস্তের কয়টি অংশ ও কি কি?
একটি দরখাস্ত মূলত তিনটি প্রধান অংশ থেকে থাকে।
প্রথম অংশ: তারিখ, প্রাপকের নাম পদবী ঠিকানা এবং বিষয়বস্তু।
দ্বিতীয় অংশ: দরখাস্তের আলোচিত মূল বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত আলোচনা অর্থাৎ বডি।
তৃতীয় অংশ: পেরকের নাম ঠিকানা এবং অনুনয় বিনিময়মূলক দু এক লাইন।
সঠিকভাবে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম ও নমুনাপত্র
মনে করুন আপনি সহকারী শিক্ষক পদের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট একটি আবেদন পত্র অর্থাৎ দরখাস্ত লিখবেন। এক্ষেত্রে মূলত আপনি নমুনা পত্র অনুযায়ী আপনার মত করে খুব সুন্দর ও গোছালোভাবে আপনার দরখাস্তটি উপস্থাপন করতে পারেন।
১৮-০৩-২০২৩ বরাবর, প্রধান শিক্ষক নলবাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংড়া-নাটোর. বিষয়: সহকারি শিক্ষক পদের জন্য আবেদন। জনাব, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে গত ১০ই মার্চ ২০২৩ তারিখে “দৈনিক জনকন্ঠ” পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মারফতে জানতে পারলাম যে— খুব সম্প্রতি আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একজন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। তাই উক্ত পদের জন্য একজন আগ্রহী প্রার্থী হিসেবে আমি আমার জীবন বৃত্তান্ত ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী দরখাস্তের মাধ্যমে উপস্থাপন করছি। ১. নাম: সেতু খাতুন
১১. অভিজ্ঞতা: আমি জুলাই ২০১৮ থেকে ‘মঠগ্রাম ব্রাক স্কুল থেকে’ সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। অতএব, মহোদয়ের সমীপে আমার আকুল আবেদন আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা পূর্বক আমাকে সহকারি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করে অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবেন। বিনীত নিবেদক, মোছা: সেতু খাতুন সংযুক্তি: ১. সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্রসমূহের সত্যায়িত ফটোকপি। ২. চারিত্রিক সার্টিফিকেট ২ কপি (১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা কর্তৃক সত্যায়িত)। ৩. পার্সপোট সাইজের ২ কপি সত্যায়িত ছবি। ৪. ব্যাংক ড্রাফট/ পে-অর্ডার। |
চাকরির দরখাস্ত লেখার ফরম ২০২৩
তারিখ-১৮/০৩/২০২৩ বিষয়ঃ সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন। জনাব
অভিজ্ঞতাঃ অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন এই যে, উল্লেখিত শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনাপূর্বক উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনীত করতে আপনার মর্জি হয়। বিনীত, মোছাঃ সেতু খাতুন। মোবাঃ +০১৭০৫০০০১১২ সংযুক্তিঃ ১। পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি ২ কপি। |
চাকরির দরখাস্ত লেখার নমুনাচিত্র
তারিখ: ১৮-০৩-২০২৩
বরাবর
জেলা শিক্ষা অফিসার
সিংড়া নাটোর
বিষয়: কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য আবেদন।
জনাব,
সবিনয় নিবেদন এই যে আমি দৈনিক সমকাল পত্রিকার সুবাদে জানতে পেরেছি যে– আপনার অধীনে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কিছু সংখ্যক কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে। উক্ত পদের জন্য আমি নিজেকে যোগ্য মনে করছি। আশা করছি একজন কম্পিউটার অপারেটর হয়ে আমি আপনাদের আশানুরূপ কাজ করতে পারব। মূলত উক্ত শূন্য পদের জন্য আমি অত্যন্ত আগ্রহী তাই আমি আমার জীবন বৃত্তান্ত ও অন্যান্য তথ্যাবলী নিচে পেশ করলাম।
১. নাম: নিরব হোসেন
২. পিতার নাম: মো: আলমগীর হোসেন
৩. মাতার নাম: হেলেনা বেগম।
৪. স্থায়ী ঠিকানা: গ্রাম ও ডাকঘর: সিংড়া জেল: নাটোর
৫. বর্তমান ঠিকানা: সিংড়া
৬. জন্ম তারিখ: ২২ জুন, ১৯৯৫।
৭. জাতীয়তা: বাংলাদেশী।
৮. ধর্ম: ইসলাম।
৯. বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত।
১০. শিক্ষাগত যোগ্যতা:
পরীক্ষার নাম | পাসের বছর | ফলাফল | শাখা | বোর্ড/বিশ্ববিদ্যালয় |
এসএসসি | ২০১১ | এ+ | বিজ্ঞান | বরিশাল বোর্ড |
এইচএসসি | ২০১৩ | এ | বিজ্ঞান | বরিশাল বোর্ড |
বিএ অনার্স | ২০১৭ | ২য় শ্রেণি | ইংরেজি | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
এমএ | ২০১৮ | ২য় শ্রেণি | ইংরেজি | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
১১. অভিজ্ঞতা: আমি ১ জুলাই ২০১৮ থেকে একটি বেসরকারি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি।
অতএব, মহত্মান সমীপে আকুল আবেদন আমার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বিবেচনাপূর্বক আমাকে সহকারি পদে নিয়োগ প্রদান করে বাধিত কররেন।
বিনীত
নিরব হোসেন
সংযুক্তি:
১. সার্টিফিকেট ও প্রশংসাপত্রসমূহের সত্যায়িত ফটোকপি।
২. চারিত্রিক সার্টিফিকেট ২ কপি (১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা প্রদত্ত)।
৩. পার্সপোট সাইজের ২ কপি সত্যায়িত ছবি।
পরিশেষে: তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সঠিকভাবে চাকরির দরখাস্ত লেখার নিয়ম সম্পর্কিত আমাদের আলোচনা পর্বের আজ এখানেই ইতি টানছি। আশা করি আমাদের দেওয়া নিয়মাবলী অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই চাকরির দরখাস্ত লিখতে পারবেন সঠিক পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
2 Comments