ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা
বর্তমান চাকরির বাজারে চাকরি প্রার্থীর যেমন অভাব নেই, ঠিক একইভাবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানেরও কমতি নেই। কেননা প্রত্যেকদিন অসংখ্য চাকরির সার্কুলার প্রকাশিত হচ্ছে উপযুক্ত লোকবল নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যারা একের পর এক ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছেন কিন্তু চাকরি মিলছে না।
কেউ কেউ তো রয়েছেন, যারা চাকরির পরীক্ষা আর ভাইভা পরীক্ষা দিতে দিতে ব্যতিব্যস্ত। আর তাই তাদের কাছে এ বিষয়টা অস্বস্তির ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কিছু তো কারণ অবশ্যই রয়েছে, যেগুলো আপনার মধ্যে বিদ্যমান। কিন্তু ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ সম্পর্কে আপনি ঠিকঠাক ভাবে অবগত নন।
আর তাইতো আজকের এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে জানাবো– ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা। তাহলে আসুন জেনে নেই– এত এত ইন্টারভিউ দেওয়া সত্ত্বেও কেন এত সংখ্যক মানুষ সেই ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যান পরবর্তী ধাপে না পৌঁছানোর আগে। ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ সমূহ সম্পর্কে এ টু জেড জানব আমরা। সো লেটস স্টার্টেড।
আরো পড়ুনঃ চাকরি সন্ধান কর্মপরিকল্পনার ৬টি ধাপ (ক্যারিয়ার ব্যবস্থাপনা)
ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা
আমাদের মাঝে এমন অনেকেই রয়েছেন যারা এডুকেশন কোয়ালিফিকেশনের দিক থেকে দারুন রেজাল্ট করে বসে আছেন কিন্তু তাদের কপালে জুটছে না চাকরি। তাই অনেকেরই মন্তব্য এটা যে– বর্তমান চাকরির বাজার বেশ চড়া। চাকরি নেই বললেই চলে।
তবে এ ধরনের কথা যে বা যারা বলে থাকেন তারা একটু চিন্তা করুন। এই মুহূর্তে যে সকল মানুষের চাকরি হচ্ছে তারাও তো আপনারই মতো সাধারণ মানুষ। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলো কেনই বা আপনাকে রেখে তাদেরকে সিলেক্ট করছে? আমাদের এই কথাটি শোনার পর নিশ্চয়ই স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ এটা বলবেন, তাদের লোক রয়েছে। তাদের পরিচিত রয়েছে তাই তাদের চাকরি হচ্ছে। যে আপনি টাকা দিতে পারছেন না ঘুষ দিতে পারছেন না তাই আপনার কপালে চাকরি জুটছে না।
তবে ভাই আপনারা যে বা যারা এই কথাটি বলেন তাদেরকে বলব আপনার এই ধারণাটা সত্যি ভুল। আর আপনি যদি এমন চিন্তাভাবনার মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য একদমই নয়। হ্যাঁ এটা ঠিক দেশের দুর্নীতি রয়েছে, পরিচিতজন থাকলে চাকরি পাওয়াটা কিছুটা সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায়। তবে অবশ্যই আপনি যদি অতিরিক্ত দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আপনার চাকরি অবশ্যই হবে এবং আপনার ডিমান্ড চাকরি বাজারে অবশ্যই থাকবে। তাই মন থেকে এই সকল ভ্রান্ত ধারণা দূর করুন।
আপনার চাকরি না পাবার কারণ কি? কখনো কি নিজে সেটা বের করার চেষ্টা করেছেন? আপনার চাকরি না পাবার কারণ কি হতে পারে সে সম্পর্কে কি কখনো ভেবেছেন? অনেকে বলবেন হ্যাঁ ভেবেছি আবার কিছু মানুষ কিছুই বলবেন না। তবে যারা বলবেন ভেবেছি তাদের বেশিরভাগ উত্তর এটা হবে যে– চাকরির জন্য ঘুষ দেওয়ার মত আপনার কাছে টাকা নেই এমনকি আপনার চেনাজানা বড়সড়ো মাপের পরিচিত কেউ নেই। আর এই কারণেই আপনার চাকরি হচ্ছে না।
তবে একটা কথা মনোযোগ দিয়ে একটু চিন্তা করুন, দেখুন আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের সামনে নিজেকে সাক্ষাৎকার এবং পরীক্ষার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি অন্য সকলের থেকে অনেক বেশি অ্যাডভান্স লেভেলের এবং আপনার মধ্যে দক্ষতা রয়েছে আপনি তাদের কোম্পানির জন্য ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবেন। তাহলে কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান অবশ্যই আপনাকে সেই সকল ঘুষ দানকারী বড় মাপের মানুষদের রেফার করা প্রার্থী থেকেও আগে তাদের কোম্পানিতে রাখার চেষ্টা করবে। আরে অন্যতম কারণ আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যতকে অবশ্যই উজ্জ্বল করতে ভূমিকা রাখবেন কেননা আপনার মধ্যে সেই ক্ষমতা, দক্ষতা ও আপনার সেই যোগ্যতা রয়েছে।
আর তাই প্রথমত নিজেকে চাকরির জন্য উপযুক্ত হিসেবে তৈরি করুন। এমনভাবে প্রিপেয়ার্ড হোন যাতে করে ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনা একেবারেই না থাকে সেই সাথে এমন ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিন যাতে ১০০ পার্সেন্ট নির্ভুল আনসার করতে পারেন। তাহলে চলুন পরবর্তী ধাপে জেনে নেই ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কিছু সাধারণ কারণ।
ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার উল্লেখিত কারণ
আপনি যদি ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়েন তাহলে সেটা অনেকটাই আপনার বোকামির উপর নির্ভর করবে। কেননা সাক্ষাৎকারে গিয়ে আমরা বেশ কিছু ভুল করে থাকি। সেগুলো হচ্ছে:
- অতিরিক্ত নার্ভাস ফিল করি।
- নার্ভাসের কারণে বেশি বকে ফেলে।
- নিজেকে উপস্থাপন করতে গিয়ে অনেকটা বাড়িয়ে বলি।
- নিজেকে উপস্থাপন করার সময় ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার আগে নেতিবাচক দিক গুলোই বেশি বলে ফেলি।
- ইন্টারভিউ বোর্ডে কিছু লেখার সময় নিজের মার্কার পেন ব্যবহার করি।
- কখনো কখনো সালাম দেওয়ার কথা ভুলে যাই।
- ম্যান ম্যান করে কথা বলি।
- বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিকঠাক রাখতে পারি না।
- বারবার নাকে হাত দেই।
- এখানে ওখানে চুলকাই, আবার কখনো কখনো কেউ কেউ কাচুমাচু করি।
- নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত মিথ্যা বলে ফেলি।
- নিজের কর্ম ক্ষেত্রে সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা না নিয়েই সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হই।
- কঠিন পরিবেশে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করি।
- নিজের কনফিডেন্স লেভেল একেবারে জিরো এটা উপস্থাপন করে ফেলি।
- শিক্ষাজীবনে বাজে রেজাল্ট কে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করি বা বারবার কোন প্রসঙ্গ তুলে নিয়ে আসি।
- প্রশ্ন ঠিকঠাক ভাবে না শুনেই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।
- সামাজিক কর্মকাণ্ডে খুব একটা অংশগ্রহণ না করে হাত গুটিয়ে বসে থাকে।
- সিদ্ধান্ত গ্রহণে একরখা মনোভাব প্রকাশ করে ফেলি।
- একটা মিথ্যা তথ্য কে সত্য করার জন্য একের পর এক মিথ্যা বলে যাই।
- কখনো কখনো বয়স ও শিক্ষা অনুযায়ী পরিপক্ক তার অভাব ফুটিয়ে তুলি।
- কোম্পানির নিয়ম বিরোধী চিন্তা চেতনার বহিঃপ্রকাশ করে ফেলি।
- সঠিক উত্তর না জানলেও ভুলভাল তথ্য দিয়ে সেটা উত্তর দেবার চেষ্টা করি।
- কাজ সম্পর্কে ঠিকঠাক ভাবে না জেনেই সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হই।
- আগ্রহ ও কৌতূহলের অভাব কখনো কখনো জিরো লেভেলে পৌঁছে যায়, যেটা সাক্ষাৎকারীরা একদম পছন্দ করে না।
- উত্তর দেওয়ার সময় হাতের আঙ্গুল ফুটাই
- যে কোন প্রশ্নের উত্তরের সময় সাক্ষাৎকারের দিকে না তাকিয়ে আকাশের দিকে তাকাই বা এদিক সেদিক তাকাতুকি করি।
- কম্পিটিশনে প্রচন্ড ভয় পাই।
- স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করার মনোভাব প্রকাশ করে ফেলি।
- মুখ গোমরাটে বা অতিরিক্ত মেয়েলি ভাবে উপস্থাপন করে ফেলি।
- নিজের দুর্বলতাকে প্রকাশ করা হয়ে যায়।
- আমার চাকরিটা খুব দরকার চাকরিটা না হলে আমার একেবারেই চলবে না, এমন কথা বলে ফেলি।
- প্রশ্ন করার পর উত্তর দিতে অনেকটা সময় নিয়ে নেই।
- ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে বারবার ফোন চেক করি।
- কখনো কখনো ফোনের রিংটোন অফ বা সাইলেন্ট করতে ভুলে যাই।
আবার প্র্যাকটিক্যাল ও জেনারেল নলেজের প্রচন্ড অভাব থাকার কারণেও মূলত ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যাই। আর তাই যারা ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ে যান তারা মূলতো এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কেননা আপনার এই ভুলগুলো আপনাকে আপনার এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন এর উপর ভিত্তি করেও ভালো চাকরি দিতে বাধা প্রদান করছে।
ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারে টিকে যাওয়ার টিপস
আপনি যদি ইন্টারভিউ তে নিজেকে ঠেকাতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণগুলো মাথায় রাখতে হবে এবং কিছু টিপস অনুসরণ করতে হবে। সেগুলো হল:
- আপনাকে কেন নির্বাচন করা হবে চাকরির জন্য সেটা সাক্ষাৎকারে অল্প আলোচনার মাধ্যমে সাক্ষাৎকারীদের কে বোঝাতে হবে।
- আপনি যে তাদের চাহিদা মেটাতে পারবেন এবং আপনি যে তাদের কোম্পানির বা প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন যোগ্য ব্যক্তি দা এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন এবং আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ও অন্যান্য দিকগুলোর মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
- অতিরিক্ত ক্ষমতা বা টাকার বড়াই দেখালে চলবে না। সব সময় চেষ্টা করতে হবে নিজের যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে চাকরিটা পাওয়ার।
- বেতনের ক্ষেত্রে তাদেরকে জানাতে হবে আপনার যোগ্যতা এবং আপনার কাজের উপর ভিত্তি করে ঠিকঠাক পারিশ্রমিক দেওয়ার।
- সব সময় স্মার্টলি ও স্পষ্টভাবে কথা বলতে হবে। নাকি কানে হাত দেওয়া, কোথাও চুলকানো, ইত্যাদি বিষয়ে পরিহার করতে হবে।
- নিজের ভেতরের জনতা কে কাটিয়ে তাদের প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে ইজি করে দিতে হবে।
- নিজের দুর্বলতাকেই প্রকাশ না করে নিজের যা যা দক্ষতা রয়েছে সেটা খুব অল্প আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে।
- আপনি যে বর্তমান অনলাইন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন, আপনি যে এডভান্স তা সাক্ষাৎকারে জানানোর চেষ্টা করুন।
- চেষ্টা করুন উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে সেই সময়টুকু হ্যান্ডেল করার।
“ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে আরো ধারণা পেতে নিচের ইমেজ গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন”
পরিশেষে: মূলত আপনি যদি ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ এবং ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় করণীয় বিষয়গুলো মাথায় রেখে সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হতে পারেন এবং সেই সময়টা নিজের উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে খুব স্বাভাবিকভাবে পার করতে পারেন তাহলে আশা করা যায় আপনি চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবেন এবং বিশেষভাবে তাদের নজরে আসবেন।
তাই সবসময় চেষ্টা করুন চাকরিদাতাকে আপনার প্রশ্ন, উত্তর এবং কথাবার্তার মধ্য দিয়ে সন্তুষ্ট করার। সে সাথে অবশ্যই তাদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে সব সময় কথা বলার। কেননা অনেকেই স্পষ্ট ভাষায় কথা বলতে গিয়ে এমনভাবে স্ট্রেটকাট কথা বলেন যেটা অভদ্রতার বহিঃপ্রকাশ। তাই নিজের মধ্যে নম্রতা ভদ্রতা শালীনতা এবং নিজের দক্ষতার ও যোগ্যতার উপর নজর দিয়ে সব সময় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
তো পাঠক বন্ধুরা, ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আমাদের আজকের আর্টিকেলটি পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো? সেই সাথে যদি ভালো লেগে থাকে এবং উপকৃত হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত যে কোন প্রশ্নের নোটিফিকেশন পেতে আমাদের ডেইলি স্মার্ট টিপস এর সাথে থাকুন। আজ এ পর্যন্তই আল্লাহ হাফেজ।
One Comment