সিভি লেখার নিয়ম | সিভি ফরমেট (cV format for job) কেমন হওয়া উচিত?
চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই সিভি লেখার সঠিক নিয়ম জানতে হবে। কেননা এটা আপনি নিশ্চয়ই জানবেন যে– চাকরি প্রস্তুতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো- ভালো সিভি তৈরি করা। আপনাকে এমন একটা সিভি লিখতে জানতে হবে, যেটা দেখার পর যে কেউ আপনাকে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য ডাকবে। আর আমরা সবাই কমবেশি অবগত যে– ড্রিম জব পেতে হলে আমাদের পথের সর্বপ্রথম দুইটা বাধা দেখা দেয়। তার একটি হচ্ছে ইন্টারভিউ এবং অপরটি হচ্ছে সিভি। লক্ষ্য করলে এটা বুঝতে পারবেন সিভির গুরুত্বটাই অধিক বেশি।
কেননা আপনার যদি সিভি দেখে জব কর্তৃপক্ষের পছন্দ হয় তবেই না ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক আসবে। কি তাইতো?. জ্বি একদমই তাই। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা আজ আমরা আমাদের আলোচনার মাধ্যমে আপনাদেরকে অবগত করবো— সিভি লেখার নিয়ম।
সম্পূর্ণভাবে জানাবো সিভি ফরম্যাট কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে। তাহলে আসুন সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে জেনে নেওয়া যাক।
আরো পড়ুনঃ ইন্টারভিউ টিপস | কিভাবে ইন্টারভিউ দিতে হয়?
সিভি লেখার নিয়ম
বর্তমান চাকরির বাজারে চাকরি পাওয়াটা খুবই টাফ। তবে আপনি যদি নিজেকে যোগ্য এবং উপযুক্ত প্রার্থী হিসেবে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সামনে তুলে ধরতে পারেন তাহলে আপনার চাকরি সুনিশ্চিত। আর এজন্য আপনাকে ঠিকঠাক চাকরির প্রস্তুতি নিতে হবে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়তে হবে। আর আপনার যোগ্যতার সম্পূর্ণটা সর্বপ্রথম সিভির মাধ্যমেই উপস্থাপন করতে হবে।
আমাদের মাঝে বেশি সংখ্যক মানুষ চাকরিপ্রার্থী হিসেবে বেশ বড় একটা ভুল করে থাকেন। আর সেটা হচ্ছে কম্পিউটার কম্পোজের দোকানে পাওয়া সিভি চাকরির আবেদনের সময় জমা দিয়ে দেন। আপনি হয়তো লক্ষ্য করলে এটা বুঝতে পারবেন– অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সকল সিভির মান ঠিক থাকে না। তাই সিভি লেখার নিয়ম আপনাকে জানতে হবে এবং মানসম্মত একটি সিভি বানাতে হবে, যেটা আপনাকে চাকরি পেতে বাধ্য করবে।
সিভি কি/সিভি কাকে বলে?
CV এর পূর্ণরূপ হলো Curriculum Vitea (কারিকুলাম ভাইটা)। এটি মূলত দুই তিন পাতার একটি সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত যেখানে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার মূল অংশসমূহ উল্লেখ করা থাকে। তবে চাকরির পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আবার একাডেমিক বিভিন্ন কাজে সিভির প্রয়োজন রয়েছে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিভি মূলত ইংরেজিতে লেখা হয়ে থাকে। তবে আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাংলাতেই সিভি লেখার নিয়ম আলোচনা করব। সেই সাথে জানিয়ে দেবো ইংরেজিতে সিভি লেখার নিয়ম। তাহলে আসুন জেনে নেই কিভাবে সঠিক নিয়মে আপনি সিভি লিখবেন।
সিভি ফরম্যাট | সিভির আধুনিক ফরমেট কেমন হওয়া উচিত?
বর্তমানে সিভির ফরমেট কেমন হওয়া উচিত? এমন প্রশ্ন অধিকাংশ মানুষের মাঝেই প্রকাশ পায়। দেখুন সিভি মূলত এমন একটি ডকুমেন্ট, যা দেখে খুব কম সময়েই আপনার এমপ্লয়ার আপনাকে মূল্যায়ন করবেন। এখানে তারা মূলত আপনার গাদা গাদা বর্ণনা জাতীয় লেখা পড়তে যাবেন না। তাই নির্দিষ্ট একটা ফরমেটে লিখতে হবে সিভি। যেটা অত্যন্ত স্মার্ট দেখাবে। তাহলে আসুন জেনে নেই বর্তমানে একটি সিভির ফরমেট কেমন হওয়া উচিত!
✓প্রথমত: আপনি চাকরির জন্য অথবা একাডেমিক কারণে যে প্রয়োজনেই সিভি লিখে থাকেন না কেন, অবশ্যই শিভির দৈর্ঘ্য এক থেকে দুই পেজের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। আপনাকে অনেক কম শব্দের মধ্যে অনেক অল্প বর্ণনার মাধ্যমে সম্পূর্ণ তথ্য ফুটিয়ে তুলতে হবে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে।
✓দ্বিতীয়তঃ আপনাকে অবশ্যই ‘A4’ সাইজের পেইজ ব্যবহার করতে হবে সিভি লেখার ক্ষেত্রে।
✓তৃতীয়ত: ‘Arial’, ‘Times New Roman’ বা ‘Calibri’ ফন্টে লিখতে হবে উক্ত সিভি।
✓চতুর্থত: সব সময় ১১ অথবা ১২ ফ্রন্টের সাইজ বেছে নিতে হবে।
✓পঞ্চমত: এক থেকে দুই ধরনের ফ্রন্ট কালার ব্যবহার করতে হবে। অবশ্যই চেষ্টা করবেন এর অধিক কালার ব্যবহার না করতে। কেননা অতিরিক্ত জাঁকজমক কালার আপনার সিভির মান কমিয়ে ফেলবে।
✓ষষ্ঠমত: সিথির প্রত্যেকটা অংশকে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। আর এক্ষেত্রে ১৪-১৬ ফ্রন্ট সাইজের সাব হেডিং ব্যবহার করবেন।
✓সপ্তমত: ইম্পর্টেন্ট বিষয়গুলোকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে এবং পড়ার সুবিধার জন্য বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করবেন। তবে হ্যাঁ এটা অবশ্যই সারাংশের জন্য প্রযোজ্য নয়।
✓অষ্টমত: দুই লাইনের মধ্যে সর্বদা যথেষ্ট স্পেসিং বজায় রাখার চেষ্টা করবেন এবং বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া সিভির ডিজাইনে বৈচিত্র্যতা নিয়ে আসবেন না। কেননা নিয়ম দাদার কাছে আপনার সেই ডিজাইন দৃষ্টিকটু লাগতে পারে তাই এ বিষয়টা নজরে রাখুন।
তো ফ্রেন্ডস আশা করা যায়, আপনি যদি শুধুমাত্র এই আটটি স্টেপ ফলো করেন এবং আমাদের ফরমেট অনুযায়ী চাকরির জন্য সিভি লেখেন তাহলে অবশ্যই আপনার সেই সিভি গ্রহণযোগ্য হবে।
সিভির অংশ সমূহ | একটি সিভিতে কি কি থাকে?
একটি সিভির মূলত ছয়টি অংশ থেকে থাকে। আপনি যদি চাকরির বাজারে টিকে থাকতে চান এবং নিয়োগদাতার দৃষ্টিতে থাকতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই সিভিতে ছয়টি অংশকে রাখতেই হবে। তাহলে আসুন জেনে নেই সিভিতে কি কি থাকে এবং আপনি যদি আপনার নিজের জন্য সিভি লেখেন তাহলে আধুনিক নিয়ম অনুসারে সিভিতে কয়টি অংশ রাখবেন এবং সেগুলো কি কি।
যেহেতু সিভির অংশ ছয়টি তাই প্রথমত সেই অংশ সমূহ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। যথা:
- ব্যক্তিগত তত্থাংশ
- সারাংশ
- কাজের অভিজ্ঞতা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা
- রেফারেন্স
ব্যক্তিগত তথ্য
শিফির এই অংশে আপনি আপনার নাম, ফোন নাম্বার এবং ইমেইলের ঠিকানা রাখতে পারবেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যোগাযোগের ঠিকানাটাও দেওয়া যেতে পারে এই অংশে। তবে অনেকেই একটি প্রশ্ন করে থাকেন ব্যক্তিগত তথ্যের মধ্যে ছবি দেওয়া আবশ্যক কি নয়? তাদের প্রশ্নের উত্তরে বলব আপনার ছবি দেওয়া আবশ্যক নয় তবে আপনি চাইলে দিতে পারেন।
সারাংশ
সারাংশ শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আর তাই বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই অংশে খুব সংক্ষেপে নিজের পরিচয় বর্ণনা করতে হবে আপনাকে। ইংরেজিতে যেটাকে বলা হয় পার্সোনাল স্টেটমেন্ট বা অবজেক্টিভ। অবশ্যই চেষ্টা করবেন সারাংশটি ১০০ শব্দের মধ্যে লিখতে এবং আপনি কোন ধরনের ক্যারিয়ার গড়তে চান ও সে ক্যারিয়ারের সাথে বর্তমান চাকরি কিভাবে সম্পর্কযুক্ত সেটা স্পষ্ট ভাবে খুব অল্প আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরবেন, যেটা নিয়োগ ব্যথার দৃষ্টি আকৃষ্ট করবে।
কাজের অভিজ্ঞতা
আপনি পূর্বে কোন ধরনের কাজ করতেন সে সম্পর্কে বর্ণনা করবেন সিভির এই অংশে সেই সাথে সাম্প্রতিক কাজের কথা অবশ্যই সবার আগে লিখবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
সিভিতে অবশ্যই আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা উল্লেখ করতেই হবে। আর এটা আমাদের প্রত্যেকেরই জানা। তাই কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখের পরবর্তীতে সাম্প্রতিক ডিগ্রি বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে আপনার আলোচনা এই অংশে শুরু করুন। মাস্টার্স ডিগ্রিধারী হলে এইচএসসি অথবা এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
দক্ষতা এবং অর্জন
বর্তমানে আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করতে চাচ্ছেন তার সাথে সম্পর্কিত যদি কোন দক্ষতা থেকে থাকে তা অবশ্যই উল্লেখ করবেন এবং প্রাসঙ্গিক হলে পুরস্কার সম্মাননা বা প্রকাশনার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। তবে আপনি যেটাই উল্লেখ করেন না কেন তা অতিরিক্ত বর্ণনা করবেন না খুব সংক্ষেপে ভালোভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবেন নিয়োগ দাতাকে। যেটা পড়ার পর তার মনে নেতিবাচক কোন প্রভাব না ফেলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং আপনাকে অবশ্যই ভাইবার জন্য সিলেক্ট করবে।
রেফারেন্স
আপনার কাজ বা দক্ষতা অথবা যোগ্যতা নিয়ে ভালো ধারণা রয়েছে এমন দুই একজন ব্যক্তির নাম বা যোগাযোগের জন্য রেফারেন্স হিসেবে তাদের ঠিকানা দিয়ে দেবেন। আর রেফারেন্স হিসেবে যাদেরকে দিচ্ছেন অবশ্যই তাদেরকে জানিয়ে রাখবেন। তবে রেফারেন্স অংশ সকল চাকরির জন্য বাধ্যতা মূলক করা হয়নি।
সিভি লেখার নিয়ম এবং সিভির ধরন কি?
সিভি লেখার ফরমেট আমরা ইতোমধ্যে আপনাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি। তবে পরবর্তীতে সিভি লেখার নিয়ম আরও সুস্পষ্ট ভাবে বোঝানোর সুবিধার্থে আমরা নমুনা হিসেবে কিছু সিভি উল্লেখ করব। তবে এ পর্যায়ে আপনি কোন ধরনের সিভি লিখবেন সে সম্পর্কে অল্প-স্বল্প আলোচনা করে নেওয়া যাক। তাহলে আসুন শুরু করি।
আপনি যদি সিভি সম্পর্কে অল্প কিছুটাও জেনে থাকেন তাহলে এটা জানবেন সিভি প্রধানত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে দক্ষতা ভিত্তিক সিভি এবং আরেকটি হচ্ছে কাজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সিভি। দক্ষতা ভিত্তিক সিভি হচ্ছে– যে চাকরির জন্য আপনি আবেদন করছেন তার সাথে সম্পর্কিত দক্ষতা গুলোর উপর জোর দিয়ে সুন্দরভাবে সিভি লিখতে পারা। আর বর্তমানে আপনি যে কাজটি করছেন সেটা পূর্বেও করেছেন সেই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে সিভি লেখা হলো কাজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সিভি।
তাই অবশ্যই চাকরির সার্কুলার ভালোভাবে অনুসরণ করতে হবে আপনাকে। কেননা যে সকল চাকরিতে কাজের নমুনা অর্থাৎ পোর্টফলিও থাকা দরকার, অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো প্রয়োজন সেক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সিভি লিখতে হবে আপনাকে। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে অনেকেই ভুল করে থাকেন একটি বিষয়ে। আর সেটা হলো:-
অনেকেই অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সিভিতে মূলত আপনি পূর্বে কি কি কাজ করেছেন, কোন কোন কাজের দায়িত্বে ছিলেন ইত্যাদি বর্ণনা করতে গিয়ে একগাদা কথা বলে ফেলেন। তবে এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরী। আর সেটা হলো – কাজের অভিজ্ঞতা ভিত্তিক সিভি মূলত এই সকল বিষয়বস্তু বর্ণনা আকারে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে না।
নিয়োগ দাতারা এই সিভির মাধ্যমে এটা জানতে চায় যে– আপনি পূর্বে যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন তারা আপনার কারণে কতটুকু সাফল্যতা পেয়েছে এবং আপনি নিজেকে কতটা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছেন। তাই অতিরিক্ত বাড়তি কথা না বলে এ পর্যায়ে আপনি শুধুমাত্র সেই প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সাহায্য করেছেন সেটা উল্লেখ করবেন।
বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে নিচের পয়েন্টগুলো এক নজরে মনোযোগ সহকারে পড়ে ফেলুন।
- নির্ভুল বানান ও ভাষা নিশ্চিত করা জরুরি সিভি লেখার ক্ষেত্রে। কেননা ভুলে ভরা সিভি নিয়োগদাতাদের মনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
- আপনি যে চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি দেখে চাকরির জন্য আবেদন করছেন সে অনুযায়ী সিভির ভাষা এবং ধরনে পরিবর্তন আনুন।
- যথাসম্ভব সহজ এবং ছোট ছোট বাক্যের মাধ্যমে নিজেকে প্রকাশ করার চেষ্টা করুন।
- অপ্রয়োজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক কোনো কথা লেখা থেকে বিরত থাকুন।
- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নির্দিষ্টভাবে যদি উল্লেখ করা না থাকে তাহলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্টের লিংক আপনি শেয়ার করবেন না। তবে প্রযোজ্য হলে নিজের লিংকডইন একাউন্ট এর লিঙ্ক ব্যক্তিগত তথ্যের সেকশনে সাজিয়ে রাখতে পারেন।
- কিছু কিছু শব্দের অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন না। চেষ্টা করবেন লিডারশিপ বা প্যাশনেট এ ধরনের শব্দগুলোকে রিজেক্ট করবার।
- সিভিতে চেষ্টা করবেন যে প্রতিষ্ঠানে আপনি কাজের জন্য যোগদান করতে চাচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজের অভিজ্ঞতা দক্ষতা এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা ভালোভাবে উল্লেখ করবার।
আশা করা যায় সিভি লেখার সময় যদি আপনি এই বিষয়গুলো ফলো করে চলতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার সিভি গ্রহণযোগ্য হবে এবং নিয়োগ দাতাদের কাছে বেস্ট সিভি হিসেবে গণ্য হবে এবং আপনার ইন্টারভিউ এর জন্য ডাক আসবে।
আরো পড়ুনঃ ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়ার কারণ ও ব্যাখ্যা
সিভি লেখার সময় কমন কিছু ভুল
সিভি লেখার সময় আমরা সচরাচর খুবই জানাশোনা কিছু ভুল করে বসি। তাই অবশ্যই এক্ষেত্রে এই কমন কিছু ভুল এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন। সেগুলো হলো:
- সঠিক ইমেইল ঠিকানা ব্যবহার না করা।
- ইমেইল করার সময় সঠিক সাবজেক্ট অর্থাৎ বিষয়বস্তু ঠিকঠাক ভাবে না লেখা।
- ইমেইলের সাবজেক্ট অথবা বিষয়ে স্পেলিং মিসটেক/ড্রামাটিকাল মিস্টেক হওয়া
- জীবন বৃত্তান্ত সঠিক নামে সেভ না করা।
- সিভি এবং ছবি আলাদাভাবে পাঠানো।
- সিভি সঠিক ফরমেটে না পাঠানো।
- বাংলা ভাষায় ইমেইলের বিষয় বা সাবজেক্ট লেখা।
- সিভির স্ট্রাকচার বা লেখার ধরন অগোছালো হওয়া।
- সিভি পাঠানোর সময় ইমেইলের বডিতে কোন কিছু না লিখা।
- সিভির সাথে কভার লেটার সংযুক্ত না করা প্রভৃতি।
তাই সঠিক নিয়মে সিভি লিখতে চাইলে অবশ্যই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন এবং নির্ভুলভাবে করার চেষ্টা করবেন।
সিভিতে কোন কোন শব্দ গুলো এড়িয়ে চলা উচিত?
আমরা সচরাচর স্মার্টনেস প্রকাশ করতে গিয়ে বেশ কিছু শব্দ সিভিতে ব্যবহার করে ফেলি যেগুলো নিয়োগ দাতাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই এক্ষেত্রে সিভিতে কোন কোন শব্দগুলো একেবারেই না রাখার চেষ্টা করবেন সেগুলো জেনে নিন। 👉👉
- “Can Do Any Work”
- “Is Required”
- “Results-Oriented Professional”
- “Cross-Functional Teams”
- “Superior communication skills”
- “More than [x] years of progressively responsible experience.
সিভি লেখার নিয়ম বাংলাতে | সিভির নমুনা পত্র
আধুনিক সিভি লেখার নিয়ম | চাকরির জন্য সিভি লেখার নিয়ম ইংরেজিতে
চাকরির জন্য কভার লেটার
আপনার পুরো সিভির একটি সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে কভার লেটার। মূলত আপনার সিভিটি দেখতে বাধ্য বা আকৃষ্ট করার জন্য আধুনিক যুগের অন্যতম হাতিয়ার এটি। চাকরির জন্য সিভি বা জীবন বৃত্তান্ত যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক একইভাবে কাভার লেটারেরও গুরুত্ব রয়েছে। তাই সঠিক নিয়মে অবশ্যই আপনাকে চাকরির কাভার লেখা লিখতে জানতে হবে। নিচে বোঝার সুবিধার্থে আমরা কাভার লেটার নিয়ম হিসেবে একটি নমুনা চিত্র সাজেস্ট করছি।
Sample Cover letter -01 07 March 2023 To The Sr. General Manager (HR & Admin) Megna Group of Industries Fresh Villa, House # 15, Road # 34, Gulshan-01,Dhaka. Subject: For the position of Shift Engineer. Dear Sir, With response to your advertisement on “The daily Prothom-alo” dated 20/09/14, I strongly believe my knowledge, education, experience & sincerity will make me the ideal candidate for the post. I have completed my B.Sc. Engineering Course on Mechanical Engineering from CUET/BUET. · Major Subject Completed in Industrial Management, Automobile, Production and Operation Management, Refrigeration & Air-conditioning, Production Process, Power Plant Engineering. Completed a 2 weeks Training Course from Bangladesh Industrial Technical Assistance Center (BITAC). Completed a Day long Program on “Professionalism at Work” Jointly organized by www.bdjobs.com and Infinity HR. Presently doing job in Dhaka Tobacco Industries Leaf Processing Factory (Akij Group), Golora, Manikgonj, as a Shift In-charge. My complete CV with Passport size colored photograph is added with this cover letter. I believe that I can effectively add to the overall goals based on my knowledge in this area. Sincerely, Name of The Applicant B. Sc. Engineer in Mechanical Engineering E-mail: Contact No: |
তবে হ্যাঁ কাভার লেখার আগে আপনার কিছু করনীয়তা রয়েছে সেই সাথে অবশ্যই কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। যেগুলো আমরা আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আপনাদেরকে জানাবো।
কাভার লেটার লেখার পূর্বে আপনার করণীয় হবে আপনি বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করার জন্য চাকরির বিজ্ঞপ্তির উপলক্ষে আবেদন করছেন সেই কোম্পানি বা বিজ্ঞাপন সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং ওই কোম্পানির কাজ, কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দের কর্মকান্ড এবং চাকরি প্রত্যাশী ও প্রতিযোগীদের ধরন সম্পর্কে অবগত হওয়াটাও জরুরী। তাহলে আসুন জেনে নেই কভার লেটার লেখার সময় কি কি বিষয় রাখতে হবে এবং কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সে সম্পর্কে।
- লেখার সময় সব সময় চেষ্টা করবেন তা সবচেয়ে ছোট আকারে প্রকাশ।
- সব সময় মার্জিত ভাষায় কভার লেটার লিখবেন।
- শুরুতে সবচেয়ে সুন্দর ও সাবলীল বাক্য দিয়ে কাভার লেটারের প্রথম লেখা শুরু করবেন যাতে করে আপনার সেই প্রথম লাইন পরেই নিয়োগদাতা আকৃষ্ট হতে পারেন।
- অনেকেই এমন বাক্য লেখেন যেমন, চাকরিটি পেলে আমি ধন্য হয়ে যাব, চাকরিটা আমার খুব খুব খুব প্রয়োজন ইত্যাদি ইত্যাদি। মনে রাখবেন নিয়োগ কর্তা কখনো আপনার এই সকল আজগুবি কথা জানতে চান না তারা মূলত এটা জানার আগ্রহ প্রকাশ করেন যে আপনি ওই কাজের জন্য কতটুকু যোগ্য ও উপযুক্ত। কখনোই দুর্বলতায় প্রকাশ করবেন না।
- সব সময় নিজে কাভার এটা লেখার চেষ্টা করুন কখনোই কপি পেস্ট করবেন না।
- প্রয়োজনীয় নয় এমন ব্যক্তিগত তথ্য কাভার লেটারে উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।
আশা করা যায় এই কয়েকটি সতর্কবার্তা মাথায় রাখলে আপনি খুব ভালোভাবে আপনার কভার লেটার উপস্থাপন করতে পারবেন। আরেকটি কপুলেটরে কি কি থাকে? ইতিমধ্যে আমরা আপনাদেরকে জানিয়েছি এবং নমুনা হিসেবে তা উল্লেখ করেছি।
সিভি ফরমেট পিডিএফ ফাইল | সিভি ফরমেট পিডিএফ ডাউনলোড
বরাবর সভাপতি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় লাকসাম,কুমিল্লা। বিষয়ঃ সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য আবেদন। জনাব, বিনীত নিবেদন এই যে, গত ০৫ জানুয়ারি,২০২১ ইং তারিখে “দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম যে,আপনার বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে ২ জন লোক নিয়োগ দেওয়া হবে। আমি উক্ত পদের একজন প্রার্থী হিসেবে আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ যাবতীয় আনুষাঙ্গিক তথ্যাদি মহোদয়ের নিকট তুলে ধরলাম। ১। নামঃ আবদুল্লাহ আল মামুন ২। পিতার নামঃ ৩। মাতার নামঃ ৪। বর্তমান ঠিকানাঃ ৫। স্থায়ী ঠিকানাঃ ৬। জন্ম তারিখঃ ৭। জাতীয়তাঃ ৮। ধর্মঃ ৯। শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ পরীক্ষার নাম বোর্ড পাশের সন প্রাপ্তগ্রেড এসএসসি কুমিল্লা ২০০৬ জিপিএ-৫ এইচএসসি কুমিল্লা ২০০৮ জিপিএ-৫ বিবিএ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৩ প্রথম শ্রেণী এমবিএ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ প্রথম শ্রেণী ১০।অভিজ্ঞতাঃ ১)………উচ্চ বিদ্যালয়,সহকারী শিক্ষক,৩ বছর ২)………উচ্চ বিদ্যালয়,সহকারী শিক্ষক,১ বছরঅতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত আবেদন এই যে, আমকে আপনার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেতে আপনার একান্ত মর্জি হয়।বিনীত আপনার একান্ত বাধ্যগত (আবদুল্লাহ আল মামুন) মোবাঃ ০১৮৩০-০০০০০০ তারিখ-১০ জানুয়ারি,২০২১ ইং সংযুক্তিঃ ১। পাসপোর্ট সাইজের সত্যায়িত ছবি ২ ফটোকপি। ২। একডেমিক সকল সনদপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি। ৩। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি। ৪। ৫০০ টাকার পোস্টাল অর্ডার। |
পরিশেষে: সিভি লেখার নিয়ম সম্পর্কিত আমাদের আজকের আলোচনা মূলত এখানেই শেষ করছি। তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, সিভি লেখার নিয়ম এবং সিভি লেখার ফরমেট সম্পর্কে যদি আপনাদের কোন মন্তব্য থেকে থাকে আমাদের কমেন্ট করে জানান। সেই সাথে নমুনা চিত্রের মাধ্যমে উল্লেখিত প্রাথমিক সিভিগুলো নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকলে সেটাও আমাদেরকে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিন।
আশা করছি আমাদের দেওয়া ইনস্ট্রাকশন গুলো অনুসরণ করলে আপনি যে কোন সিভি খুব সুন্দর ও সঠিকভাবে লিখে ফেলতে পারবেন। আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন এবং নিয়মিত এমন গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট এর নোটিফিকেশন সবার আগে পেতে আমাদের সাথে থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
3 Comments