বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে A টু Z
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। অনেকেরই জানার আগ্রহ থাকে– বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা কি এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার উপায় কি! কেউ কেউ জানতে ইচ্ছুক– বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হলে কি কি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায় অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারদের ক্ষমতা কি কি!
মূলত সেই সকল অডিয়েন্সদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে আজকে আলোচনা করতে চলেছি– বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে বিস্তারিত। আপনি যদি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে A টু Z জানতে ইচ্ছুক হয়ে থাকেন তাহলে আজকের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।
প্রশাসন ক্যাডার কী | বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কারা?
বর্তমানে বিশাল সংখ্যক চাকরিপ্রার্থীদের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস অর্থাৎ বিসিএস। আর বিসিএস এর কয়েকটি ক্যাটাগরির মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারে মানুষের রয়েছে বেশি আগ্রহ।
অনেকেই এসএসসি অথবা এইচএসসি পাস করার সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে বিসিএস ক্যাডার হবেন এমন চিন্তাভাবনাই করতে থাকেন এবং সেই অনুযায়ী প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করতে চান।
আর ঠিক এ কারণেই বিসিএস ক্যাডার কত প্রকার, কোন ক্যাডার হওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগবে এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যাডারদের ক্ষমতা ও তাদের কাজ কি সে সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা পরে।
আর মানুষের মুখে মুখে সচরাচর প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা সবথেকে বেশি এমনটাই শোনা যায়। তাই ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে A টু Z.
মূলত বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এর যদি সুনির্দিষ্ট একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয় তাহলে বলা চলে– ভারতীয় উপমহাদেশের সিভিল সার্ভিসের একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সার্ভিস হলো বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার। যেটা পূর্বে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে মূলত সরকারের সকল প্রশাসনিক কাজ, প্রতিবেদন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনা সহ যাবতীয় সকল ক্যাডারদের সমন্বয় সাধন করার কাজগুলো বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের দ্বারা সম্পূর্ণ করা হয়।
সুতরাং এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে বা যারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পরবর্তীতে প্রশাসনিক কাজকর্ম করার সুযোগ পায় তারাই হলো বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার। যাদেরকে বিসিএস এডমিনও বলা হয়।
প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা
প্রশাসন ক্যাডার বা বিসিএস এডমিন ক্যাডার কারা তাদের সঙ্গে না হয় পরিচয় হলো। কিন্তু এখন কথা হচ্ছে– প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার যোগ্যতা কি কি? কেউ যদি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হতে চায় তাহলে তাকে কি কি যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে!
সত্যি বলতে– প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা অর্জনের পাশাপাশি শারীরিক যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে। কেননা শিক্ষাগত যোগ্যতা যাচাই করার পাশাপাশি প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য শারীরিক যোগ্যতা বিবেচনা করা হয়। তাই আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শারীরিক যোগ্যতা যাচাই এর ব্যাপারে আলাদা আলাদা ভাবে আলোচনা করবো।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হতে হলে ওই প্রার্থীকে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্ত ডিগ্রি অথবা স্বীকৃত বোর্ড থেকে এইচএসসি পাসের পর দীর্ঘ চার বছর মেয়াদি শিক্ষা সমাপনীর ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
সেই সাথে অবশ্যই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্দিষ্ট একটা জিপিএ পয়েন্ট থাকতে হবে, যেটা কয়েক বছর পর পর পরিবর্তিত হয়ে থাকে। তবে ইতিমধ্যে প্রকাশিত বিসিএস নিয়োগ পরীক্ষার নোটিসে উল্লেখ্য রয়েছে– কোন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার প্রার্থী যদি তার শিক্ষা জীবনে একের অধিক বার তৃতীয় বিভাগ অর্থাৎ থার্ড ক্লাস পেয়ে থাকে তাহলে সে বিসিএস পরীক্ষার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
অতএব এর উপর ভিত্তি করে বলা যায়– মোটামুটি ভালো পয়েন্টের অধিকারী হতে হবে একজন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীকে। সেই সাথে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করতে হবে। তো পাঠক বন্ধুরা– আশা করি বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার কি ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয় এ বিষয়টি আপনাদের কাছে সুস্পষ্ট। এবার আসুন জেনে নেই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শারীরিক যোগ্যতা ও অন্যান্য যোগ্যতা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের শারীরিক যোগ্যতা: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নারী এবং পুরুষ প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতা বিবেচনায় ভিন্নতা রয়েছে। আমাদের উল্লেখিত বিষয়ের সাথে যদি আপনার শারীরিক ফিটনেস এর মিল থেকে থাকে তাহলে আপনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হবার জন্য যোগ্য প্রার্থী বলে নিজেকে সিলেক্টে করতে পারেন।
পুরুষ পার্থীদের প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্ত হবার জন্য শারীরিক যোগ্যতা হিসেবে সর্বনিম্ন উচ্চতা থাকতে হবে ৫ ফুট থেকে ৬ ফুট ৫ ইঞ্চি। সেই সাথে ওজন হতে হবে ৪৯ থেকে ৫০ কেজির মত।
অন্যদিকে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার মহিলা প্রার্থীদের নিয়োগ প্রাপ্ত হবার জন্য শারীরিক যোগ্যতা হিসেবে সর্বনিম্ন উচ্চতা হতে হবে ৪.১০ ফুট এবং ওজন হতে হবে ৪৩ থেকে ৪৪ কেজি। অতএব এই উচ্চতা এবং ওজন যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে আপনি প্রশাসন ক্যাডারে শারীরিক দিক দিয়েও যোগ্য হিসেবে বিবেচ্য হবেন।
আর হ্যাঁ, বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডার অর্থাৎ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে হলে একজন কর্মকর্তার যোগ্যতা হিসেবে কিছু বিষয়ের উপর বিশেষ দক্ষতা ও জ্ঞান থাকা অতীব জরুরি হয়ে পরে। সেগুলো হলো:-
- যেকোনো সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা
- রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনার ক্ষমতা
- সরকারি প্রশাসন কাঠামো ও নীতিমালা সম্পর্কিত পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান
- নির্বাহী দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করার সক্ষমতা ও বিশেষ দক্ষতা
- কমিউনিকেশন দক্ষতা
- মানসিক চাপ সামলানোর সক্ষমতা এবং
- নতুনত্ব টেকনোলজি প্রযুক্তির সাথে সম্পৃক্ততা।
এক কথায়, বিশেষ প্রশাসন ক্যাডার/বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের দায়িত্ব পালন করার জন্য যা যা প্রয়োজন সে সবকিছু সম্পর্কে দক্ষ ও যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। আর তাই বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার জন্য অন্যান্য দক্ষতা ও যোগ্যতা হিসেবে আপনার মাঝে এই গুণাবলী গুলো থাকতে হবে।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার উপায়
বিশেষ প্রশাসন ক্যাডার হবার উপায় হচ্ছে বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারে নিয়োগ প্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার যে সকল যোগ্যতা দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রয়োজন সেই সবকিছু নিজের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করা। তাই বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন ক্যাডারে চাকরি পেতে চাইলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করার চেষ্টা করুন। যথা:-
১. প্রস্তুতি নিন: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য প্রথমত বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন। মানে আপনার পরীক্ষার বিষয়বস্তু, সাধারণ জ্ঞান, সাক্ষাৎকার ও প্রশ্ন-উত্তর প্রকাশনার জন্য একটি ভাল প্রস্তুত প্ল্যান তৈরি করুন।
২. বিস্তারিত পরীক্ষার সিলেবাস জানুন: বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য দ্বিতীয়ত বিসিএস প্রশাসন পরীক্ষার সিলেবাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন। কেননা এতে করে আপনি আপনার পড়ার প্ল্যান কে খুব সুন্দর ভাবে সাজাতে পারবেন এবং কোন বিষয়ে আপেক্ষিক গুরুত্ব দিতে হবে সে সম্পর্কে ধারণা পেতে সক্ষম হবেন।
৩. প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরীক্ষার জন্য সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান, ও গণিতে প্রস্তুতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর তাই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার উপায় হিসেবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য নিজেকে একদম শক্তপোক্তভাবে গড়ে তুলুন।
৪. মেন্স পরীক্ষা: প্রিলিমিনারি পরীক্ষা পাস করার পর, আপনাকে মেন্স পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হতে হবে। এই পরীক্ষায় বিস্তারিত জ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ও বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে প্রদর্শন করতে হয়। তাই এতে টিকে চাওয়ার জন্য এবং যোগ্য হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করার জন্য সঠিকভাবে গড়ে তুলুন।
৫. সাক্ষাৎকার অর্থাৎ ভাইবা: মেন্স পরীক্ষা পাস করার পর, আপনাকে সাক্ষাত্কারের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। কেননা সাক্ষাত্কারে আপনার ব্যক্তিগত যোগ্যতা, বৈশিষ্ট্য, ও জ্ঞানের পরীক্ষা নেওয়া হবে আর তবে না আপনি পরবর্তী স্টেপে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
৬. মেডিক্যাল টেস্ট: সাক্ষাৎকার পাস করার পর আপনাকে ফিজিক্যাল ও মেডিক্যাল টেস্ট দিতে হতে পারে। এই পরীক্ষায় আপনার শারীরিক যোগ্যতা এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। আর একজন বিশেষ প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার জন্য শারীরিক যোগ্যতা হিসেবে কতটুকু কি প্রয়োজন সেটা তো ইতোমধ্যে আমরা আলোচনা করে ফেলেছি। তাই যদি শারীরিকভাবে কোন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাহলে সেটা ছাড়িয়ে ফেলার জন্য দেরি না করে খুব দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
৭. অনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ (ফাউন্ডেশন কোর্স): মেডিক্যাল টেস্ট পাস করার পর, আপনাকে অনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হতে পারে, যা একটি ফাউন্ডেশন কোর্স হিসেবে সংবর্ধিত।
এক কথায়— আপনি যদি ধৈর্যশীল হয়ে থাকেন এবং কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে এই প্রত্যেকটি ধাপ পেরোতে পারেন তাহলে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার হবার উপায় আপনার কাছে সুস্পষ্ট হবে। কেননা আপনি এ কয়েকটি ধাপ বেরিয়ে আসতে পারলে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হবার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
প্রশাসন ক্যাডার এর কাজ কি?
একজন প্রশাসন ক্যাডারের কাজ কি কি এটা কিছুটা হলেও ধারণা পেয়েছেন প্রশাসন ক্যাডার কারা বা প্রশাসন ক্যাডার কি এই সংজ্ঞাটি পড়ার মাধ্যমে। এবার আসুন আরো সুস্পষ্টভাবে জেনে নেই বিসিএস এডমিন ক্যাডারে অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার কাজ কি কি সে সম্পর্কে। পাশাপাশি আরো জেনে নেই বিসিএস এডমিট ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা কোথায় কাজ করেন?
একজন বিসিএস প্রশাসন কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কাজ করে থাকেন। এছাড়াও এক্সেকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাহী আদালতে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। একজন বিশেষ প্রশাসন ক্যাডার তার কর্মজীবনে যে কাজগুলো সম্পাদন করে থাকেন সেগুলো হলো—
- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অর্পিত নির্বাহী দায়িত্ব পালন
- বাস্তবায়িত সরকারের নীতির ফলাফল যাচাই ও ফিডব্যাক প্রদানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকদের সহযোগিতা
- সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে তদারকি
- সিনিয়র সহকারী কমিশনারের আবর্তমানে তাদের সকল দায়িত্ব পালন
- এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ
- ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনার দায়িত্ব পালন
- সুশাসন নিশ্চিতকরণে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার কাজ
- বিভিন্ন কার্যক্রমে অনুমতি প্রদান এবং
- যানবাহন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের তদারকি করন সহ প্রভৃতি।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দায়িত্ব কি কি?
কাজ এবং দায়িত্ব মূলত একই অর্থ প্রকাশ করে। তবুও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দায়িত্ব আরো বিস্তারিতভাবে জানার জন্য নিচের ইমেজটি লক্ষ্য করুন।
প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা
আপনি যদি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের দায়িত্ব এবং কর্তব্যগুলো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে একজন প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা কি কি হতে পারে সেগুলো নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন। কেননা ইতিমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি সরকারের সকল প্রশাসনিক কাজ বিসিএস এডমিন বা বিসিএস প্রশাসন কর্মকর্তারা করে থাকেন।
তবে কাজ, দায়িত্ব কর্তব্য এবং সুযোগ-সুবিধা নেতাদের সবদিক বিবেচনা করে যদি বলা হয় তাহলে বিভিন্ন ক্যাডারদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ক্ষমতা সবথেকে বেশি। এখন আসুন ধারাবাহিকভাবে জেনে নেওয়া যাক– প্রশাসন ক্যাডার অর্থাৎ বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের নিয়োগ পাবার পদ্ধতি, বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার মাসিক ইনকাম, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার ক্যারিয়ার সম্ভবনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের পদক্রম, পদোন্নতি ও সুযোগ সুবিধার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পদ্ধতি
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যদি আপনি নিয়োগ পেতে চান সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। সেগুলো হলো-
- বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা
- বিসিএস লিখিত পরীক্ষা এবং
- সরাসরি মৌখিক পরীক্ষা
এগুলোর মধ্যে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা মূলত ২০০ নম্বরের হয়ে থাকে। অন্যদিকে লিখিত পরীক্ষা হয়ে থাকে ৯০০ নম্বরের এবং সরাসরি মৌখিক পরীক্ষায় মার্ক থেকে থাকে ২০০ নম্বর।
আর হ্যাঁ একজন প্রশাসন ক্যাডার জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা হিসেবে পেয়ে থাকে ২২ হাজার থেকে শুরু করে ৩৭ হাজার টাকা। তবে হ্যাঁ এই টাকার পরিমাণ আরো অনেক বেশিতে পৌঁছায় যদি পদোন্নতি হয়ে থাকে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা
একজন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সুযোগ সুবিধা গুলো হলো:
- বিশেষ প্রশাসন ক্যাডার থেকে শতকরা ৮০ভাগ সচিবালয়ে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।
- পদোন্নতির দারুন সুযোগ রয়েছে প্রশাসন ক্যাডারে
- কম বয়সে চাকরিতে জয়েন করার সক্ষমতা থাকলে এক পর্যায়ে ক্যাবিনেট সচিব হওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে, যে কারণে মর্যাদা সংসদ সদস্য থেকেও বেশি লাভ করা যায়
- গাড়ি, বাংলো ইত্যাদি পাওয়া যায় এবং স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যায়
- বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ ভোগ করা যায় এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে কাজ করা যায়
- বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও ট্রেনিং করার জন্য সরকারি খরচ ভোগ করা যায় এবং
- বিভিন্ন অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়ে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়।
এক কথায়– প্রফেশনাল ভাবে সমাজে মাথা উঁচু করে এবং সম্মানের সাথে বাঁচতে চাইলে সেই সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়া সম্ভব বিসিএস অ্যাডমিন বা বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে একজন উচ্চতর কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। তবে হ্যাঁ এর কিছু অসুবিধা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে–
- প্রশাসনিক ক্যাডারে কাজ করার ফলে দুর্নীতির বেশ অভিযোগ এসে থাকে, যে কারণে কখনো কখনো সত্য প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত কটু কথা শুনতে হয়
- এডমিন অর্থাৎ প্রশাসনিক ক্যাডারের পদোন্নতি অনেকটা ধীরগতি এবং কাজে বৈচিত্রতা অনেক বেশি, তাই ট্রান্সফার হয়ে থাকে ঘন ঘন।
প্রশাসন ক্যাডার কেন পছন্দ?
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, প্রশাসন ক্যাডার কেন পছন্দ? ২৬ টি ক্যাডারের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ প্রশাসন ক্যাডার সবার প্রথমে চয়েস দিয়ে থাকে। আর তাই প্রশাসন ক্যাডার কেন পছন্দ এটা প্রায় শতভাগ মানুষের প্রশ্ন।
এর উত্তরে বলা যায়– প্রশাসন ক্যাডারে মূলত অন্যান্য ক্যাডারের তুলনায় সুযোগ-সুবিধা বেশি ও ক্ষমতা অনেক বেশি। এছাড়াও বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারদের বেতন অন্যান্য ক্যাডারদের তুলনায় এগিয়ে। আর ঠিক এ কারণেই সম্মান অর্থ এবং সকল দিক বিবেচনা করে প্রশাসন ক্যাডার বেশিরভাগ মানুষের প্রথম পছন্দের তালিকায় অবস্থিত।
প্রশাসন ক্যাডারের পদক্রম
একজন প্রশাসন ক্যাডারের পদক্রম দুই ভাবে হয়ে থাকে। একটি হচ্ছে সচিবালায় পদক্রম আরেকটি হচ্ছে মাঠ প্রশাসন। আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা প্রশাসন ক্যাডারের মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদক্রম ও সচিবালয় পদক্রম বা পদোন্নতির ধারাবাহিকতা তুলে ধরবো। সেই সাথে তাদের বেতন কত সেটাও জানিয়ে দেব।
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার: মাঠ প্রশাসন
পদের গ্রেড | মাঠ প্রশাসন | মূল বেতন |
গ্রেড-০৩ | বিভাগীয় কমিশনার | ৫৬,৫০০-৭৪,৪০০ |
গ্রেড-০৪ | অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার | ২৫,৭৫০-৫০,০০০ |
গ্রেড -০৫ | জেলা প্রশাসক | ৬৬,০০০-৭৬,৪৯০ |
গ্রেড-০৬ | অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার | ৩৫,৫০০-৬৭,০১০ |
গ্রেড -০৯ | সহকারী কমিশনার | ২২,০০০-৫৩,০৬০ টাকা |
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার: সচিবালয় পদক্রম
পদের গ্রেড | সচিবালয় পদক্রম | বেতন |
স্পেশাল গ্রেড | মন্ত্রিপরিষদ ও মুখ্য সচিব | ৯০,০০০+ |
সুপার গ্রেড | সিনিয়র সচিব | বেতন নির্দিষ্ট নয় |
গ্রেড -০১ | সচিব | ৭৮,০০০ |
গ্রেড-০২ | অতিরিক্ত সচিব | ৬৬,০০০ – ৭৬,৪৯০ |
গ্রেড-০৩ | যুগ্ম সচিব | ৫৬,৫০০ – ৭৪,৪০০ |
গ্রেড -০৫ | উপসচিব | ৪৩,০০০ – ৬৯,৮৫০ |
গ্রেড-০৬ | সিনিয়র সহকারী সচিব | ৩৫,৫০০-৬৭,৮৫০ |
গ্রেড -০৯ | সহকারী সচিব | ২২,০০০-৫৩,০৬০ |
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি
বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি মাঠ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সাধারণভাবে নিম্ন বর্ণিত নীতিমালা অনুসরণ করে হয়ে থাকে। যথা:-
- সহকারি কমিশনার (শিক্ষানবিশ)
- সহকারি কমিশনার (ভূমি)
- উপজেলা নির্বাহী অফিসার
- সিনিয়র সহকারী সচিব
- জেলা ও উপজেলায় পদায়ন
- অন্যান্য
এ বিষয়ে যদি আপনি আরও সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান তাহলে এখনই এই লিঙ্কে থাকা পিডিএফটি দেখুন (ক্লিক করুন)
তো সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার সম্পর্কে A টু Z জানার পর নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আর কোন প্রশ্ন নেই। তবুও যদি আরো প্রশ্ন থেকে থাকে আমাদের কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দিতে পারেন এবং বিসিএস ক্যাডার হতে হলে কি করতে হবে।
সেই সাথে– কয় ধরনের বিসিএস ক্যাডার রয়েছে ইত্যাদি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত আরো একটি আর্টিকেল পড়ে ফেলতে পারেন, যা আমরা ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছি। তো সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।